নোয়াখালী জেলা | Noakhali District | বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য
নোয়াখালী জেলা | Noakhali District | বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য
নোয়াখালী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে
অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যানুসারে নোয়াখালী
বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা।
নোয়াখালী জেলার প্রাচীন নাম ছিল ভুলুয়া।
নোয়াখালী সদর থানার আদি নাম সুধারাম। ইতিহাসবিদদের মতে একবার ত্রিপুরার পাহাড়
থেকে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদীর জলে ভুলুয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভয়াবহভাবে প্লাবিত
হয় ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসাবে
১৬৬০ সালে একটি বিশাল খাল খনন করা হয়, যা
পানির প্রবাহকে ডাকাতিয়া নদী হতে রামগঞ্জ, সোনাইমুড়ি ও
চৌমুহনী হয়ে মেঘনা এবং ফেনী নদীর দিকে প্রবাহিত করে। এই বিশাল নতুন খালকে
নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় নোয়া (নতুন) খাল বলা হত, এর
ফলে অঞ্চলটি একসময়ে লোকের মুখেমুখে পরিবর্তিত হয়ে নোয়াখালী হিসাবে পরিচিতি লাভ
করতে শুরু করে।
এ জেলার পূর্বে চট্টগ্রাম জেলা ও ফেনী জেলা,
উত্তরে কুমিল্লা জেলা ও চাঁদপুর জেলা, পশ্চিমে লক্ষ্মীপুর জেলা ও
ভোলা জেলা এবং দক্ষিণে হাতিয়া উপজেলা এবং বঙ্গোপসাগর রয়েছে।
নোয়াখালী জেলার মোট আয়তন ৪২০২.৭০ বর্গ
কিলোমিটার। রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ১৬০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম
বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার।
নোয়াখালী জেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক
ঢাকা-নোয়াখালী মহাসড়ক এবং চট্টগ্রাম-নোয়াখালী মহাসড়ক। সব ধরনের যানবাহনে এ
জেলার সাথে যোগাযোগ করা যায়। এছাড়াও এ জেলায় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাও রয়েছে।
বর্তমান নোয়াখালী জেলা আগে ফেনী,
লক্ষ্মীপুর এবং নোয়াখালী জেলা নিয়ে একটি বৃহত্তর অঞ্চল ছিল,
যা এখনও বৃহত্তর নোয়াখালী নামে পরিচিত।
নোয়াখালীর ইতিহাসের অন্যতম ঘটনা ১৮৩০ সালে
নোয়াখালীর জনগণের ওয়াহাবি আন্দোলন ও ১৯২০ সালের খিলাফত আন্দোলনে সক্রিয়
অংশগ্রহণ।
নোয়াখালী বাংলাদেশের একমাত্র জেলা যার নিজ
নামে কোন শহর নেই। নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী নামে পরিচিত। ১৯৪৮ সালে যখন উপজেলা
সদর দফতর মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়ে যায়, তখন তা
৮ কিলোমিটার উত্তরে সরিয়ে ১৯৫০ সালে জেলার সদর দপ্তর অস্থায়ীভাবে মাইজদীতে
স্থানান্তর করা হয়।
চৌমুহনী এ জেলার আরেকটি ব্যস্ত শহর ও
বাণিজ্য কেন্দ্র, যা একসময়ে মুদ্রণ ও
প্রকাশনা ব্যবসার জন্য বিখ্যাত ছিল।
নোয়াখালী জেলায় ৯টি উপজেলা রয়েছে এবং এগুলো
হলোঃ
কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, চাটখিল, নোয়াখালী
সদর, বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, সুবর্ণচর, সোনাইমুড়ি, হাতিয়া
এছাড়াও এ জেলায় ১০টি থানা,
৮টি পৌরসভা এবং ৬টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।
নোয়াখালী জেলার সাক্ষরতার হার ৬৯.৫০%। এ
জেলায় রয়েছে:
১টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১টি সরকারি মেডিকেল কলেজ
১টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সহ অনেকগুলো
স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ।
নোয়াখালী জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর।
আঞ্চলিক জিডিপির প্রায় ৪০% কৃষি খাত থেকে আসে এবং জেলার ৮০ ভাগ লোক এই পেশার সাথে
সংশ্লিষ্ট। কৃষির মধ্যে মূলত মৎস্য চাষ ও মৎস্য আহরণের সাথে সবচেয়ে বেশি মানুষ
জড়িত।
নোয়াখালী জেলার প্রধান নদী মেঘনা। এছাড়াও
উল্লেখযোগ্য নদীর মধ্যে ডাকাতিয়া ও ছোট ফেনী নদী অন্যতম।
১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১০
লক্ষ লোকের প্রাণহানি ঘটে, যার মধ্যে নোয়াখালী
জেলার অনেকে ছিলেন।
এ জেলার উল্লেখযোগ্য স্থানের এর মধ্যে আছেঃ
গাজী এয়াকুব আলী (রঃ) মাজার শরীফ
কল্যান্দি জমিদার বাড়ি
কল্যান্দী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির
গান্ধি আশ্রম
নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া
নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান
ফকির ছাড়ু মিজি (রহ.) সাহেবের দরগাহ,
মাইজদী
বজরা শাহী মসজিদ
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোহাম্মদ রুহুল আমিন
গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর, সোনাইমুড়ি
মহাত্মা গান্ধী জাদুঘর
মাইজদী কোর্ট বিল্ডিং দীঘি
ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল,
চর বাটা
শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম
স্বর্ণ দ্বীপ, হাতিয়া উপজেলা
ঠাকুর রামচন্দ্র দেবের সমাধি আশ্রম,
চৌমুহনী
সোনাইমুড়ী বড় মসজিদ
গোয়ালখালী বিচ,মোহাম্মদপুর, সুবর্ণচর
প্রতাপপুর রাজবাড়ী,
সেনবাগ।
এ জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে আছেনঃ
ওবায়দুল কাদের - বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ- আইনজীবী ও
রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
মোহাম্মদ রুহুল আমিন - বীরশ্রেষ্ঠ
খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা
আমিরুল ইসলাম কামাল - প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী
আনিসুল হক – ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের
প্রথম মেয়র
আবদুশ শাকুর - একুশে পদক প্রাপ্ত কথা
সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক এবং গোলাপ বিশেষজ্ঞ
আবদুল মালেক উকিল - আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ
আবদুল হাকিম - মধ্যযুগীয় কবি
আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক - প্রাক্তন
সেনাপ্রধান
আবুল কালাম আজাদ - বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত
বীর মুক্তিযোদ্ধা
আমিনুল হক - প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল - একুশে পদক প্রাপ্ত
সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব এবং কিশোর বীর মুক্তিযোদ্ধা
এ এইচ এম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী -
স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত চিকিৎসক
এ এস এম শাহজাহান - প্রাক্তন পুলিশ
মহাপরিদর্শক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা
এ টি এম শামসুজ্জামান – অভিনেতা
কবীর চৌধুরী - শিক্ষাবিদ,
প্রাবন্ধিক এবং অনুবাদক
চিত্তরঞ্জন সাহা - খ্যাতনামা প্রকাশক এবং
বাংলা একাডেমী বই মেলার উদ্যোক্তা
জহুরুল হক - আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম
শহীদ
জুয়েনা আজিজ - প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের
এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক
তবারক হুসাইন – কূটনীতিবিদ
প্রণব ভট্ট - গীতিকার এবং ঔপন্যাসিক
ফেরদৌসী মজুমদার - টিভি অভিনেত্রী
বদরুল হায়দার চৌধুরী - আইনবিদ এবং প্রাক্তন
প্রধান বিচারপতি
মঈন উদ্দিন আহমেদ - প্রাক্তন সেনাপ্রধান
মালেক আফসারী - চলচ্চিত্র পরিচালক
মাহফুজ উল্লাহ - লেখক,
সাংবাদিক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব এবং
পরিবেশবিদ
মাহবুবুর রহমান- সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী
মুনীর চৌধুরী - শহীদ বুদ্ধিজীবী
মোতাহের হোসেন চৌধুরী - শিক্ষাবিদ এবং লেখক
মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী - শহীদ বুদ্ধিজীবী
মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী - চলচ্চিত্র পরিচালক,
প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার এবং নাট্য
নির্মাতা
মোরশেদ আলম - ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স
কোম্পানির ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান।
শবনম বুবলি - চলচ্চিত্র অভিনেত্রী
শাহাদাত হোসেন চৌধুরী - অবসরপ্রাপ্ত সেনা
কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার
শিরীন শারমিন চৌধুরী - দেশের প্রথম নারী
স্পিকার
সা’দত হুসেন - বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন
এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা
সিরাজুল আলম খান-
খ্যাতিমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং রাজনৈতিক তাত্ত্বিক
হবিবুর রহমান - মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে
বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী
এম এ হাসেম - (পারটেক্স গ্রুপের
প্রতিষ্ঠাতা)
আবুল খায়ের - (আবুল খায়ের গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা)
No comments