চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা | Chapainawabgonj District | ৬৪ জেলা – District 64
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা | Chapainawabgonj District | ৬৪ জেলা
– District 64 | MD Ujjol Hossen
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি জেলা। এই জেলাটি নবাবগঞ্জ এবং চাঁপাই নামেও পরিচিত।
ভারত উপমহাদেশ বিভাগের আগে এটি মালদহ জেলার একটি অংশ ছিল এবং ১৯৮৪ সালে এটি জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অনেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কে 'আমের রাজধানী' বলেও জানে। কারন এ জেলা থেকে
প্রতিবছর ৩ লক্ষ মে:ট্রন আম উৎপাদিত হয় এবং এখাত হতে আয় হয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামটি সাম্প্রতিকালের।
জেলাবাসীর দাবির মুখে ২০০১ সালের ১লা আগস্ট সরকারিভাবে নবাবগঞ্জ জেলার নাম
পরিবর্তন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাখা হয়। পূর্বে এই এলাকাটি ‘নবাবগঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। এখানে একটা বিষয় উল্লেখযোগ্য যে দিনাজপুরের
একটা উপজেলার নামও কিন্তু নবাবগঞ্জ।
এ জেলার নামকরন নিয়ে অনেক ধরনের মত থাকলেও বলা হয়ে থাকে:
এ অঞ্চল ছিল মুর্শিদাবাদের নবাবদের
বিহারভূমি এবং এর অবস্থান ছিল বর্তমান সদর উপজেলার দাউদপুর মৌজায়। নবাবরা এখানে
শিকার করতে আসতেন বলে এ স্থানের নাম হয় নবাবগঞ্জ।
আবার নবাব আমলে এ জেলার মহেশপুর গ্রামে চম্পাবতী মতান্তরে ‘চম্পারানী বা চম্পাবাঈ’ নামে এক
বাঈজী বাস করতেন। যিনি নবাবের প্রিয়পাত্রী হয়ে ওঠেন এবং
তার নামানুসারে এই জায়গার নাম রাখা হয়
‘চাঁপাই”।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাংলাদেশের মানচিত্রে সর্ব
পশ্চিমের
একটি জেলা এবং এর পূর্বে রাজশাহী ও নওগাঁ জেলা, উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ জেলা, পশ্চিমে পদ্মা নদী ও মালদহ জেলা, দক্ষিণে
পদ্মা নদী ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলা অবস্থিত।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এ জেলা ৭ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভূক্ত
ছিলো।
এ জেলার উপজেলা মোট ৫টি এবং
এগুলো হলো:
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
সদর, গোমস্তাপুর, নাচোল, ভোলাহাট এবং শিবগঞ্জ
উপজেলা
এদের মধ্যে শিবগঞ্জ সর্ববৃহৎ এবং
সবচেয়ে ছোট উপজেলা হলো ভোলাহাট উপজেলা। এছাড়াও এ জেলার
পৌরসভা আছে ০৪ টি এবং এগুলো হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ, রহনপুর ও নাচোল পৌরসভা
এ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন পাওয়া যায়,
যা এই এলাকায় বিখ্যাত
এছাড়াও এ জেলার শিক্ষার হার ৬৬%
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় যেসব নদী আছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য
হলো পদ্মা, পাগলা ও পুনর্ভবা নদী। এছাড়াও আছে মহানন্দা নদী যেটি বাংলাদেশে গঙ্গার একমাত্র
উপনদী
বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয় এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ জেলায় অবস্থিত
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়
যেসব গান প্রচলিত আছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো নানা-নাতি চরিত্রের
গম্ভিরা গান। যেটি সম্প্রতি জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব সংস্কৃতির অংশ হিসেবে
স্বীকৃতি লাভ করেছে।
এছাড়াও এখানে আরেক ধরনের গানের প্রচলন আছে যাকে আলকাপ বলা
হয়। যেখানে ছেলেরা মেয়ে সেজে নৃত্যগীত ও অভিনয়ে অংশ নেয়। যাদেরকে ছোকরা বলা হয় এবং
দলনেতাকে বলা হয় সরকার।
প্রাচীন বাংলার অন্যতম জনপদ গৌড়ের রাজধানী হিসেবে শিবগঞ্জ
উপজেলায় আছে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আদিবাসী নৃগোষ্ঠীর একটি হলো সাঁওতাল
যারা চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন মাদ্রাসার একটি হলো ১৫শতকের ঐতিহাসিক দারাসবাড়ি মাদ্রাসা যা চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থিত।
এছাড়াও এখানে একই সাথে একটি মসজিদও প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ জেলার কিছূ গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনার মধ্যে আছে
চামচিকা মসজিদ যেটি
ভারতে অবস্থিত বড় চামচিকা মসজিদের আদলে তৈরি
করা, এর দেওয়াল এত পুরু যে চৈত্র মাসের প্রচন্ড গরমেও এর মধ্যে শীতল পরিবেশ পাওয়া যায়।
ছোট সোনা মসজিদ: যেটি সুলতানি স্থাপত্যের
রত্ন বলে আখ্যায়িত
শাহ নেয়ামতুল্লাহ এর মাজার যিনি
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছিলেন
সুলতান শাহ সুজা এর বাসভবন বা তাহাখানা যেটি
তিনি শাহ নেয়ামত উল্লাহকে উপহার দিয়েছিলেন
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন
জাহাঙ্গীর এর সমাধি: যার বাড়ি বরিশালে হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়
চাঁপাইনবাবগঞ্জে শহীদ হন।
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র: যেটি
বাংলাদেশের একমাত্র আম গবেষণা কেন্দ্র যদিও পরবর্তীতে আরো কিছু ফসল নিয়ে এখানে
গবেষণা করা হচ্ছে।
বাবুডাইং: যেটি প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট কিছু
টিলাভূমির সংমিশ্রণ
এছাড়াও এখানে আছে:
নাচোল রাজবাড়ী
চাঁপাই মসজিদ,
ধানিয়াচক মসজিদ
জোড়া মঠ শিব মন্দির
নওদা স্তুপ
ছোট সোনা মসজিদ পার্ক
সোনা মসজিদ স্থল বন্দর
ষাঁড়বুরুজ
স্বপ্নপল্লী
রহনপুর নওদা বুরুজ
শেখ হাসিনা সেতু
গোয়াইন বাধ
নীলকুঠি
শুড়লার তেঁতুল গাছ
স্বপ্ন পল্লী পার্ক
টাংঘন পিকনিক পার্ক
কানসাটের জমিদার বাড়ি
এ জেলার কিছু কৃতি ব্যাক্তিদের মধ্যে আছেন:
ইলা মিত্র - উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনৈতিক
ব্যক্তিত্ব, ঐতিহাসিক সাওতাল বিপ্লব, নাচোল
বিদ্রোহ ও তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী।
প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমদ -ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য।
প্রফেসর মো.রফিকুন নবী বা (র’নবী) - আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ ফাইন আর্টস এর
সাবেক পরিচালক
আলোকচিত্রাচার্য মঞ্জুর আলম বেগ -
বাংলাদেশের আলোকচিত্র আন্দোলনের পথিকৃৎ এবং আধুনিক
ফটোগ্রাফীর জনক, একুশে পদক প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতি
সম্পন্ন আলোকচিত্রাচার্য।
বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমান শেলি - ১৯৯৬
সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বা অন্তবর্তীকালীন
বাংলাদেশ সরকার প্রধান, বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মিজান উদ্দিন -
শিক্ষাবিদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক
উপাচার্য
মমতাজউদদীন আহমদ - নাট্যকার,
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ।
ভাষা সৈনিক - এ্যাডভোকেট ওসমান গণি
কানসাট আন্দোলনের প্রথম কবি- রাজিত রহমান
লে. জে. (অব) ড. আমিনুল করিম,
এ জেলায় যেসকল দৈনিক সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত
হয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
দৈনিক গৌড় বাংলা,
চাঁপাই দৃষ্টি, চাঁপাই চিত্র , চাঁপাই দর্পণ, সীমান্তের কাগজ ও সোনামসজিদ
শেয়ার চাঁপাইনবাবগঞ্জ! 😊
তথ্যসূত্র:
১. বাংলাপিডিয়া
২. উইকিপিডিয়া
৩. চাঁপানবাবগঞ্জ জেলার ওয়েবসাইট
৪. চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ব্র্যান্ডিং বুক
No comments