চুয়াডাঙ্গা জেলা | Chuadanga District | ৬৪ জেলা – District 64 | MD Ujjol Hossen
চুয়াডাঙ্গা জেলা | Chuadanga District | ৬৪ জেলা – District 64 | MD Ujjol Hossen
চুয়াডাঙ্গা বাংলাদেশের খুলনা বিভাগে অবস্থিত
এবং দেশের নিরক্ষরমুক্ত জেলা হিসেবে পরিচিত এ জেলার সৃষ্টি হয় ১৯৮৪ সালে।
চুয়াডাঙ্গাতেই বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট
সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও স্বাধীন বাংলাদেশের ডাক বিভাগ এবং টেলিযোগাযোগ
ব্যবস্থা এই চুয়াডাঙ্গায় প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১০ই
এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার চুয়াডাঙ্গাকে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের
অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করেন এবং তা ১৬ই এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর ছিলো।
গ্রীক ঐতিহাসিকদের মতে এ এলাকাতেই বিখ্যাত
গঙ্গারিডাই রাজ্য অবস্থিত ছিল। আবার গাঙ্গেয় নামক একটি শহরও এ চুয়াডাঙ্গায়
অবস্থিত ছিল বলে শোনা যায়।
চুয়াডাঙ্গার নামকরণ সম্পর্কে কথিত আছে যে,
এখানকার মল্লিক বংশের আদিপুরুষ চুঙ্গো মল্লিকের নামে এ জায়গার
নাম চুয়াডাঙ্গা হয়েছে।
১৯৮৪ সালে কুষ্টিয়া থেকে ভাগ হয়ে চুয়াডাঙ্গা
জেলার সৃষ্টি হয় এবং
এ জেলার মূল শহর চুয়াডাঙ্গা মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত।
এ জেলার উত্তরে কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলা,
পূর্ব এবং দক্ষিণে ঝিনাইদহ জেলা, পশ্চিমে
মেহেরপুর জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অবস্থিত।
ব্রিটিশ শাসনামলে এ এলাকাটি বেশ কিছু
আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল; যেমন: ওয়াহাবী
আন্দোলন (১৮৩১), ফরায়েজি আন্দোলন (১৮৩৮-৪৭), সিপাহী বিদ্রোহ (১৮৫৭), নীল বিদ্রোহ (১৮৫৯-৬০),
খেলাফত আন্দোলন (১৯২০), স্বদেশী আন্দোলন
(১৯০৬), অসহযোগ আন্দোলন, সত্যাগ্রহ
আন্দোলন (১৯২০-৪০), ভারত ছাড় আন্দোলন (১৯৪২) ইত্যাদি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এ জেলা মুক্তি
লাভ করে ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর
এ জেলার উপজেলা ৪টি এবং এগুলো হলো:
চুয়াডাঙ্গা সদর,
আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলা
চুয়াডাঙ্গা জেলার চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা একটি
এ গ্রেডের পৌরসভা এবং এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আয়তনের পৌরসভা।
সমগ্র জেলার শিক্ষার হার ৯৯.৯৯ % এবং এ
জেলার শহরের জনসংখ্যার ১০০% শিক্ষিত।
চুয়াডাঙ্গা বাংলাদেশের মধ্যে ভুট্টা,পান,শাকসবজি, খেজুরের
গুড় উৎপাদনে প্রথম স্থান অর্জনকারী জেলা । এ ছাড়া বাণিজ্যিক ফুল এবং আম উৎপাদনে
বাংলাদেশের জেলাসমূহের মধ্যে দ্বিতীয়।
এ জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায়
অবস্থিত কেরু এ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (১৯৩৩) বাংলাদেশের বৃহত্তম চিনি
কল। এর সাথে যে ডিস্টালারিটি আছে তা বাংলাদেশের একমাত্র মদ্য প্রস্তুতকারী
কারখানা। এই বৃহদায়তন শিল্প-কমপ্লেক্সটি চিনি কারখানা, ডিস্টিলারি
ওয়াটার, বাণিজ্যিক খামার ও জৈব সার কারখানার সমন্বয়ে গঠিত।
১৮৬০ সালে বাংলাদেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন
চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন নির্মিত হয়েছিল। এছাড়াও বাংলাদেশের সর্ব প্রথম
দ্বিতীয় তলা রেলওয়ে স্টেশন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় অবস্থিত।
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধের
সর্বপ্রথম কমান্ড দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ড গঠিত হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায়। এ
ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের আট নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ছিল চুয়াডাঙ্গা সদরের ৪নং
ইপিআর এর হেডকোয়ার্টার।
এ জেলার প্রধান কিছু নদীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য
হলো:
মাথাভাঙ্গা, ভৈরব, চিত্রা, নবগঙ্গা, কুমার
ইত্যাদি।
চুয়াডাঙ্গার লোকসংস্কৃতির মধ্যে মুর্শিদী,
মারফতী ও বাউল গানচর্চা ছাড়াও যাত্রা, ভাব
গান, ভাসান গান, কবিগান, মানিক পীরের গান, কৃষকের মেঠো গান, গাজীর গীত উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের ছাগল উৎপাদনের পঁচানব্বই শতাংশই হলো ব্ল্যাক বেঙ্গল
যার বেশির ভাগই উৎপাদন হয় চুয়াডাঙ্গায়। ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট বাংলাদেশের একটি নিজস্ব
জাত যা এখন বিশ্বসেরা।
এ জেলার কিছু গুরুত্বপূর্ন স্থাপনার মধ্যে আছে:
আটকবর: পকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে শহিদ হওয়া আটজন
বীর সৈনিককে গণকবর দেওয়া হয় এই স্থানে। যা পরবর্তীতে আটকবর হিসেবে পরিচিতি পায়।
আলমডাঙ্গা বধ্যভূমি: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আলমডাঙ্গার
রেলের লাল ব্রিজের কাছে নামিয়ে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়। সেই স্থানটিতে গড়ে তোলা
হয়েছে আলমডাঙ্গা বধ্যভূমি।
কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত আটচালা ঘর: যেখানে ১৯২৬
সালে কাজী নজরুল ইসলাম স্বপরিবারে চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গায় টানা ২মাস অবস্থান করেছিলেন।
দর্শনা রেলওয়ে স্টেশন: যেটি চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলায়
অবস্থিত। যা একটি রেলট্রানজিট পয়েন্ট এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের একটি সীমান্তবর্তী
চেকপয়েন্ট। এছাড়াও মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন এই স্টেশন হয়েই যায়।
হাজার দুয়ারি স্কুল: যেটি প্রায় ২শত বছর আগে স্থাপিত হয় যা
চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী স্কুল।
ভেটেরিনারি ট্রেনিং সেন্টার: যেটি দেশের প্রথম ভেটেরিনারি
ট্রেনিং সেন্টার এবং এটি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় অবস্থিত।
ঠাকুরপুর বা পীরগঞ্জ জামে মসজিদ: কথিত আছে ১৬৯৮ সালের দিকে
ইসলাম ধর্ম প্রচারক আফু শাহ এই এলাকায় আসেন এবং এক রাতেই তার বিশেষ গুনে মসজিদটি নির্মিত
হয়।
ডিসি ইকোপার্ক: যেটি এই এলাকার অন্যতম একটি বিনোদন পার্ক
চুয়াডাঙ্গার প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদের
মধ্যে আছে:
ঘোলদাড়ি জামে মসজিদ (আলমডাঙ্গা),
কার্পাসডাঙ্গা নীলকুঠি।
বিষু শাহ এর মাজার
চার আওলিয়ার মাজার
খাজা শাহ সুফি সদর উদ্দিন আহমেদ চিশতী (আ.) এর স্মরণে দরবার
হযরত খাজা মালিক উল গাউস (রা.) এর মাজার
শত বছরের বৃদ্ধ বট গাছ
ধোপখালি শাহী মসজিদ
রাণী ভবানীর বাদশাহী জামে মসজিদ
ঘোলদারি মসজিদ
কালুপোল রাজার ভিটার প্রত্নতাত্তিক সম্পদ
শরৎচন্দ্রের মামার বাড়ি
দর্শনা কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট
আলমডাঙ্গা রেল ব্রীজ
স্বপ্নের জগৎ শিশু পার্ক
উমাপুর মিনি পার্ক
সার্কিট হাউজ
জেলা পরিষদ ডাক বাংলো
এ জেলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের মধ্যে
আছে:
হারুনুর রশীদ- বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত শহীদ
আকরাম আহমেদ- বীরোত্তম
সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন- সাবেক
হুইপ ও সাংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ।
খোদা বক্স সাঁই - (গীতিকার সুরকার ও গায়ক -
১৯৯১ সালে একুশে পদকপ্রাপ্ত
অনন্তহরি মিত্র (১৯০৬ - ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৬)
- ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব
এবং অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবী।
বেবী ইসলাম- প্রখ্যাত আলোকচিত্রী,
চিত্রগ্রাহক ও চলচ্চিত্র পরিচালক (তিনবার শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহকের
জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন)।
অশোক কুমার- ভারতের বোম্বে চলচ্চিত্রের অন্যতম বিখ্যাত অভিনেতা অশোক কুমার এর
পৈত্রিক নিবাস চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায়
ডঃ রাধা বিনোদ পাল- আন্তর্জাতিক খ্যাতি
সম্পন্ন রাধা বিনোধ পাল এর মাতুল বাড়ী দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে।
এ জেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের দৈনিক,
সাপ্তাহিক এবং মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যাদের
মধ্যে অন্যতম হলো: মাথাভাঙ্গা, প্রথম রাজধানী ইত্যাদি।
তথ্যসূত্র:
বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন
উইকিপিডিয়া
চুয়াডাঙ্গা জেলা ব্র্যান্ডিং
শেয়ার চুয়াডাঙ্গা
No comments