৩. সাতক্ষীরা জেলা | Satkhira District | জেলা ৬৪ - District 64
সাতক্ষীরা
জেলা
সাতক্ষীরা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এ জেলা সৃ্ষ্টি
হয় ১৯৮৪ সালে
প্রাচীনকালে সাতক্ষীরাকে বাগড়ী, ব্যাঘ্রতট,
সমতট, যশোর, চূড়ন
প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হতো।
অবশ্য এ জেলার নামকরণের পেছনে অনেক মত
প্রচলিত থাকলেও
প্রথম ও প্রধান মতটি হলো
’’চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় নদীয়ার
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের এক কর্মচারী বিষুরাম চক্রবর্তী নিলামে চূড়ন পরগনা ক্রয় করে
তার অর্ন্তগত সাতঘরিয়া নামক গ্রামে বাড়ি তৈরী করেন। তার পূত্র প্রাণনাথ
সাতঘরিয়া অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন করেন। ১৮৬১ সালে মহকুমা স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত
হওয়ার পর ইংরেজ শাসকরা তাদের পরিচিত সাতঘরিয়াতেই প্রধান কার্যালয় স্থাপনের
সিদ্ধান্ত নেন। ইতোমধ্যেই সাতঘরিয়া ইংরেজ রাজকর্মচারীদের মুখে ‘সাতক্ষীরা’ হয়ে
যায়।’’
দ্বিতীয় মতটি হলো একদা সাত মনীষী সাগর
ভ্রমণে এসে একান্ত শখের বসে ক্ষীর রান্না করে খেয়েছিলেন। পরবর্তীতে ‘ক্ষীর’ এর
সাথে ‘আ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ‘ক্ষীরা’ হয় এবং লোকমুখে প্রচলিত হয়ে যায়
সাতক্ষীরা।
এ জেলার পূর্বে খুলনা জেলা,
পশ্চিমে চব্বিশ পরগণা, উত্তরে যশোর জেলা
এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত
ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার দুরত্ব মাত্র ২৬৩ কি. মি.।
এ জেলার শিক্ষার হার ৫২.১%
এ জেলার অর্থনীতির মুল চালিকা শক্তি
চিংড়ি চাষ
ইউরোপসহ বহি:বিশ্বে রপ্তানীকৃত শতকরা ৭০ভাগ
চিংড়ি সাতক্ষীরা থেকে উৎপাদিত হয়। এই চিংড়িই বিদেশে "white gold" নামে পরিচিত।
এছাড়াও কৃষিজ পণ্য, বনজশিল্প এবং কুটির শিল্পও এখানে আছে
ভোমরা দেশের চতুর্থ
বৃহত্তম স্থল বন্দর যা এই সাতক্ষীরাতেই অবস্থিত
মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরা যশোরের
পর দ্বিতীয় শত্রুমুক্ত জেলা। সাতক্ষীরা ১৯৭১'সালের ৭ই
ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয়।
এই সাতক্ষীরাতেই আছে
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা
শ্যামনগর
সাতক্ষীরা জেলা হতে যে সব পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয় তাদের
মধ্যে হিমায়িত চিংড়ি, সুন্দরবনের মধু, আম, টালি
এবং সন্দেশ অন্যতম
সাতক্ষীরা ঘোষ ডেয়ারি মিষ্টান্ন তৈরীতে, বিশেষ করে সন্দেশের
জন্য বিখ্যাত এবং এর শাখা-প্রশাখা দেশের সর্বত্র জায়গায় বিস্ত্রিত
দেশের দুগ্ধ উৎপাদনে সাতক্ষীরা জেলা
দ্বিতীয় অবস্থানে আছে
এ জেলার কলোরোয়া উপজেলায় যে টালি তৈরি করা হয় তা বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
বাংলাদেশের প্রথম বাল্যবিবাহ মুক্ত উপজেলা হলো সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ।
প্রাচীনকালে সাতক্ষীরা বুড়ন দ্বীপ নামেও পরিচিত ছিল।
এ জেলার মোট আয়তনের ৩৭.৫৩% হলো বনভূমি।
বাংলাদেশের মিনি মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র
সৈকত এ জেলার শ্যামনগর উপজেলায় অবস্থিত।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃহৎ শহীদ
মিনার স্থাপিত হয় সাতক্ষীরার শহীদ আঃ রাজ্জাক পার্কে।
উপমহাদেশে বোর্ড পরীক্ষায় নামের পরিবর্তে
রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরের প্রবর্তক খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ যার
বাড়িও এই সাতক্ষীরা জেলাতেই অবস্থিত
বেতনা ও কপোতাক্ষ নদীকে সাতক্ষীরার দুঃখ বলা
হলেও
এ জেলার আরো যেসব নদী আছে তাদের মধ্যে হলো
কাকশিয়ালী, কালিন্দী, ইছামতি, হাওড়া,
গুতিয়াখালী, লাবণ্যবতী, রায়মঙ্গল ইত্যাদি।
এ জেলার উপজেলা ৭টি এবং এগুলো হলো
আশাশুনি,
দেবহাটা, কলারোয়া, সাতক্ষীরা
সদর, শ্যামনগর, তালা এবং কালীগঞ্জ
এছাড়াও এ জেলায় ২ টি পৌরসভা, ৮টি থানা, ৭৮ টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং জাতীয়
সংসদের ৪টি সংসীয় আসন রয়েছে।
এ জেলায় বিশিষ্ট যেসকল ব্যাক্তিরা জন্মগ্রহন করেছেন তাদের
মধ্যে অন্যতম হলো
মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী - একজন বাঙালি লেখক
সিকান্দার আবু জাফর - একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক
এছাড়াও ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমান ও
সৌম্য সরকারের বাড়িও এ জেলাতে অবস্থিত
সাতক্ষীরাতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অনেকধরনের স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় এসবের মধ্যে অন্যতম হলো
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ২,
বধ্যভূমি ৬, স্মৃতিস্তম্ভ ৫, স্মৃতিফলক ১, স্মরণি ৩
এছাড়াও এ জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক এবং দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে:
প্রবাজপুর শাহী মসজিদ
তেতুলিয়া জামে মসজিদ
ইশ্বরীপুর হাম্মামখানা
জাহাজ ঘাটা হাম্মামখানা ও তৎসংলগ্ন
প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ
ঝুঁড়িঝাড়া ঢিবি
যশোরেশ্বরী মন্দির
শ্যাম সুন্দর মন্দির
কোঠাবাড়ির থান
ছয়ঘরিয়া জোড়াশিব মন্দির
অন্নপূর্ণা মন্দির
সোনাবাড়িয়া মঠবাড়ি মন্দির
মোজাফফর গার্ডেন এন্ড রিসোর্ট
নলতা শরীফ, কালীগঞ্জ
মন্টু মিয়ার বাগান বাড়ি
লেক ভিউ
শ্যামনগর জমিদার হরিচরনের বাড়ি
মাটির টালি তৈরির কারখানা - কলারোয়া
বনবিবির বটগাছ- দেবহাটা,
আকাশনীলা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার;
শ্যামনগর উপজেলার ঐতিহাসিক গোপালপুর
স্মৃতিসৌধ।
এছাড়াও সাতক্ষীরা থেকে বিভিন্ন ধরনের পত্রিকা প্রকাশিত হয়
যেমন
দৈনিক সাতক্ষীরা নিউজ, দৈনিক দৃষ্টিপাত, দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরা ইত্যাদি।
শেয়ার সাতক্ষীরা
সার্বিক তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করেছেন:
চঞ্চল আবদুল্লাহ
সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা
No comments