ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা | Brahmanbaria District | বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা | Brahmanbaria District | বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য | iEducation
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যানুসারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা।
চট্টগ্রাম বিভাগের সর্ব-উত্তরে এ জেলার অবস্থান। এ জেলার দক্ষিণে কুমিল্লা জেলা; পশ্চিমে নারায়ণগঞ্জ জেলা, নরসিংদী জেলা ও কিশোরগঞ্জ জেলা; উত্তরে কিশোরগঞ্জ জেলা ও হবিগঞ্জ জেলা এবং পূর্বে হবিগঞ্জ জেলা ও ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ অবস্থিত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নামকরণ নিয়ে একাধিক মত প্রচলিত আছে। তার মধ্যে একটি হলো:
সেন বংশের রাজত্বকালে এই অঞ্চলে অভিজাত ব্রাহ্মণকুলের বড়ই অভাব ছিল। যার ফলে এ অঞ্চলে পূজা অর্চনার জন্য বিঘ্নতার সৃষ্টি হত। এ সমস্যা নিরসনের জন্য সেন বংশের রাজা লক্ষণ সেন আদিসুর কন্যকুঞ্জ থেকে কয়েকটি ব্রাহ্মণ পরিবারকে এ অঞ্চলে নিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে কিছু ব্রাহ্মণ পরিবার শহরের মৌলভী পাড়ায় বাড়ী তৈরি করে। সেই ব্রাহ্মণদের বাড়ির অবস্থানের কারণে এ জেলার নামকরণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয় বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।
প্রাচীন আমলে বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া ভূখণ্ড প্রাচীন বাংলার সমতট জনপদের একটি অংশ ছিল। বারো ভূঁইয়াদের নেতা ঈসা খাঁর জন্ম হয় বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল অঞ্চলে। পরবর্তীতে তিনি সরাইল পরগনার জমিদারি লাভ করলে এই অঞ্চলে তার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেন।
১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন কুমিল্লা জেলার তিনটি মহকুমা কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুরকে পৃথক জেলার মর্যাদা দেওয়া হলে সেবছরের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে গঠিত হয় বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা।
শিক্ষা ও সংস্কৃতির পীঠস্থান রূপে পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আয়তন ১,৯২৭.১১ বর্গ কিলোমিটার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ৯টি উপজেলা এবং ৯টি থানা নিয়ে গঠিত এবং এগুলো হলো:
আখাউড়া, আশুগঞ্জ, কসবা, নবীনগর, নাসিরনগর, বাঞ্ছারামপুর, বিজয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর এবং সরাইল।
এছাড়াও এ জেলায় ৬টি সংসদীয় আসন রয়েছে।
মুঘল আমলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মসলিন কাপড় তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল। এ জেলার বিখ্যাত মিষ্টান্নের মধ্যে ছানামুখী অন্যতম, যা দেশের অন্য কোন অঞ্চলে তেমন প্রচলন নেই। এছাড়া তালের রস দিয়ে তৈরি আরেকটি মিষ্টান্ন তালের বড়া ও রসমালাই বিখ্যাত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ জেলার সাক্ষরতার হার ছিলো ৪৫.৩% যদিও তা এখন অনেক বেশি হবে।
এ জেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে:
অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
হাবলাউচ্চ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর কলেজ
ইউনাইটেড কলেজ
ইসলামপুর কলেজ
আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া তাজুল উলুম তাহাফফুজে খতমে নবুয়ত
আল বাতুল মহিলা মাদ্রাসা ইত্যাদি!
শিল্পক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গুরুত্ব অসামান্য। এ জেলা তাঁত শিল্পের জন্য পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি ১৯৬২ সালে আবিষ্কৃত ও ১৯৬৮ সালে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা তিতাস গ্যাস ফিল্ড দেশের এক-তৃতীয়াংশ গ্যাস সরবরাহ করে। আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র। আশুগঞ্জ সার কারখানা দেশের ইউরিয়া সারের অন্যতম বৃহত্তম শিল্প কারখানা। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া বন্দর যেটি ১৯৯৪ সালে স্থাপিত হয়। এছাড়াও এ জেলায় বিসিক শিল্পনগরী স্থাপিত হয় ১৯৮৫ সালে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানীও বলা হয়। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ,আলী আকবর খান,বাহাদুর খান এর মত খ্যাতিমান সঙ্গীতজ্ঞের জন্ম এখানে । পুতুল নাচের জন্যও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিখ্যাত । ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম পুতুল নাচের প্রচলন করেন এ জেলার নবীনগর উপজেলার বিপিন পাল ।
ঢাকা থেকে এ জেলার সাথে সড়কপথ, রেলপথ এবং নদী পথ দিয়ে যোগাযোগ সম্ভব। গুগল ম্যাপ অনুসারে সড়ক পথে ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব ১২০ কিঃমিঃ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় নৌ যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম তিতাস ও মেঘনা নদী। এছাড়াও অনেকগুলো শাখা নদী রয়েছে। আশুগঞ্জ ঘাটের সাথে হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও কিশোরগঞ্জের লঞ্চ যোগাযোগ রয়েছে। তাছাড়া আশুগঞ্জে আন্তর্জাতিক নৌ-বন্দর স্থাপন করা হয়েছে এবং এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ।
এ জেলার কিছু দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
শ্রীশ্রী আনন্দময়ী কালী মন্দির
কালভৈরব মন্দির
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জন্ম ভিটা
হতীরপুল
আরিফাইল মসজিদ
অবিনাশ চন্দ্র সেনের প্রাসাদ
আশুগঞ্জ সার কারখানা
আশুগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ
বঙ্গবন্ধু স্কয়ার
তিতাস গ্যাসক্ষেত্র
কাল ভৈরব মন্দির
শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ
হরিপুর জমিদার বাড়ি
গোকর্ণ নবাব বাড়ি
এ জেলার ঐতিহ্যবাহী উৎসবের মধ্যে আছেঃ
নৌকা বাইচ
আসিল মোরগ লড়াই
গরুর দৌড়
ভাদুঘরের বান্নী (মেলা)
খড়মপুর কেল্লাশাহ (র) মাজার শরীফ এর বার্ষিক ওরশ
চিলোকুট গ্রামে সৈয়দ আঃ রউফ এর ওরশ
এ জেলার পরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
মোহাম্মদ আশরাফুল- বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান
প্রবীরকুমার সেন বা খোকন সেন- খ্যাতনামা টেস্ট ক্রিকেটার
ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী- অখিলচন্দ্র নন্দী, অতীন্দ্রমোহন রায়, উল্লাসকর দত্ত , বিধুভূষণ ভট্টাচার্য, সত্যেন্দ্রচন্দ্র বর্ধন
আতাউর রহমান খান খাদিম - মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ চিকিৎসক
আবদুল হাফিজ — লেখক, প্রাবন্ধিক এবং সাংবাদিক
আল মাহমুদ — কবি ও ঔপন্যাসিক
আহমদ রফিক — কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক
ফজল শাহাবুদ্দীন —বাংলা একাডেমি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক
আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া — প্রত্নতত্ত্ববিদ
আব্দুস সাত্তার খান — মহাকাশ বিশেষজ্ঞ, রসায়নবিদ ও উদ্ভাবক
এম. এ. জাহের — বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জ রিপ অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক, জাহেরাইটের আবিষ্কারক
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে-
আনিসুল হক , আবদুস সাত্তার ভূঞা, এ বি তাজুল ইসলাম, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর , ফরিদুল হুদা, মোহাম্মদ সায়েদুল হক, হারুন আল রশিদ, হুমায়ূন কবির
নুরুল আমিন- সাবেক পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
গোলাম আযম — বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির
নবাব সৈয়দ শামসুল হুদা — গোকর্ণর নবাব, নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সভাপতি
অমর পাল — লোক সংগীতশিল্পী ও লেখক
আবেদ হোসেন খান — উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী, সেতার বাদক ও সুরকার
বিশ্বখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী- উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, আফতাবউদ্দিন খাঁ, আলী আকবর খাঁ, আয়েত আলী খাঁ
মনমোহন দত্ত — মলয়া সংগীতের জনক
মোবারক হোসেন খান — সংগীতশিল্পী
শেখ সাদী খান — সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার
সৈয়দ আব্দুল হাদী — সংগীতশিল্পী
অভিনয় শিল্পী- আলমগীর, জাকিয়া বারী মম ,জিয়াউল রোশান, ডলি জহুর, তাসনোভা হক এলভিন, নিলয় আলমগীর, রফিকুল বারী চৌধুরী, রাশেদা চৌধুরী
শিক্ষাবিদ- মমতাজউদ্দিন আহমেদ, কবীর চৌধুরী, মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ, শাহনারা হোসেন
আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম — বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সপ্তম সেনাপ্রধান
শাকিল আহমেদ — বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রাক্তন প্রধান
আকবর আলি খান — অর্থনীতিবিদ
আবদুল মোনেম — আবদুল মোনেম লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা
আহমেদ আকবর সোবহান — বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান
ফয়জুর রহমান — চেয়ারম্যান নভোএয়ার
সালেহউদ্দিন আহমেদ — বাংলাদেশ ব্যাংকের নবম গভর্নর
বেগম কামরুন নাহার — বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধান তথ্য কর্মকর্তা
এছাড়াও এ জেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়।
শেয়ার ব্রাহ্মণবাড়িয়া!!
No comments